সামাজিক পরিসংখ্যান বলতে কি বুঝ? পরিসংখ্যানের এককগুলো লিখ
ভূমিকা:- সামাজিক বিজ্ঞান সমাজের সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু, সামাজিক প্রপঞ্চ নিয়ত পরিবর্তনশীল, বিভিন্নতায় পরিপূর্ণ এবং বেশিরভাগ সময় গুণগত বৈশিষ্ট্য বহন করে, যা সহজে ইন্দ্রিয়গোচর হয় না। গুণবাচক তথ্য পরিমাপ করা যায় গণনা করা যায় না।
সামাজিক পরিসংখ্যান সংজ্ঞা:
সামাজিক গবেষণায় ব্যবহৃত পরিসংখ্যানকে সামাজিক পরিসংখ্যান বলা হয়ে থাকে। এটি পরিসংখ্যানেরই একটি শাখা যেখানে সামাজিক বিষয়াদির গুণাত্মক ও সংখ্যাত্মক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা গুণাত্মক ও সংখ্যাতত্মক উভয় ধরনের তথ্যের সুশৃঙ্খল অধ্যয়নের জন্য পরিসংখ্যানের বিভিন্ন ধরনের কলাকৌশলকে সামাজিক গবেষণায় প্রয়োগ করেছেন। এটিই সামাজিক পরিসংখ্যান।
হ্যান্সরাজ সামাজিক পরিসংখ্যানের সংজ্ঞায় বলেন, সামাজিক পরিসংখ্যান সেই সকল মৌল পরিসংখ্যানিক সূচকসমূহকে নির্দেশ করে যা কোনো একটি দেশের সামগ্রিক সামাজিক অবস্থা বিশেষ করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জীবন যাত্রার মানের পরিবতর্নশীলতা ও গতি প্রকৃতির হা সংখ্যাত্মক বিবরণ প্রদানে সক্ষম হয়।
নরম্যান আর কার্টজ এর মতে, "সামাজিক পরিসংখ্যান হচ্ছে এমন কতকগুলো পদ্ধতির সমষ্টি যা সামাজিক জীবনের বিভিন্ন উপাদান সর্ম্পকে সংখ্যাত্মক তথ্য সংগ্রহ, বর্ণনা ও বিশ্লষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।"
সামাজিক পরিসংখ্যান পরিসংখ্যানের একটি আধুনিক শাখা হিসেবে সামাজিক প্রপঞ্চসমূহের ব্যাখ্যা, বর্ণনা ও তুলনাকরণের জন্য সংখ্যাত্মাক তথ্য সংগ্রহ ও শ্রেণিবিন্যাস করে থাকে। সামাজিক পরিসংখ্যান ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দেয় সুনিদিষ্ট দিকনির্দেশনা।
পরিসংখ্যানের এককগুলো সংক্ষেপে আলোচনা
বর্তমান যুগে যেকোনো গবেষণা কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জ্ঞানের একটি শাখা হিসাবে সমাজবিজ্ঞান সামাজিক পরিসংখ্যান আলোচনা করে। পরিসংখ্যান গবেষণার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে। এগুলোর মধ্যে পরিসংখ্যানমূলক অনুসন্ধান একটি। পরিসংখ্যানে তথ্য সংগ্রহের জন্য এর সাহায্য দেওয়া হয়।
পরিসংখ্যানের এককঃ পরিসংখ্যানের গবেষণায় কোনো বিষয়ের একক নির্ধারণ করা হয়। এ একক সুনির্দিষ্ট ও সুস্থায়ী হলে গবেষক ও তথ্য প্রদানকারী উভয়ের সুবিধা হয়। কেননা, নির্দিষ্ট একক ব্যবহার করলে কোনো বিষয়ের প্রতি সবার একই রকম ধারণা থাকে। তাই এককের সংজ্ঞা এমন হওয়া উচিত যেন বিভিন্ন গবেষকের অনুসন্ধান দল যেন সমার্থক হয়।
কোনো বিষয়ের একক সংজ্ঞা দিলে গবেষণার কাজ সহজ হয়। কিন্তু কোনো বিষয়ের একক সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। পরিসংখ্যান এককের সংজ্ঞা নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে দেওয়া যেতে পারে।
১. সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হতে হবেঃ
সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হলে সবার কাছে বোধগম্য হয়, সবাই সহজেই বুঝতে পারে। যে গবেষণার লক্ষ্য হলো তথ্য প্রদান, সে তথ্য মানুষের কাছে বোধগম্য করে তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হতে হবে।
২. একক হতে হবে সুস্থায়ীঃ
গবেষণার সুবিধার্থে একক হতে হবে সুস্থায়ী।কারন পরিসংখ্যানে একক নির্ধারণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল তাই বারবার একক পরিবর্তন সম্ভব নয়। কারণ, একক পরিবর্তন হলে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। একক সুস্থায়ী হলে দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতেও গবেষণার কাজ সমার্থক হয়।
৩. এককগুলো হতে হবে একজাতীয়ঃ
এককগুলো একজাতীয় হওয়া প্রয়োজন। গবেষণার সকল স্তরে একই। একক ব্যবহার সম্ভব না হলে, প্রয়োজনে ছোট ছোট অংশ বিভক্ত করে নেওয়া যেতে পারে।
৪. একক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বোধগম্য হতে হবে:
অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো বিষয়কে সাধারণের কাছে বোধগম্য করে তোলা। তাই একক নির্ধারণ এমন হওয়া উচিত যেন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বোধগম্য হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পরিসংখ্যানমূলক অনুসন্ধানের সফল ও সার্থক করতে হলে প্রথমেই অনুসন্ধানকারীকে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। পরিসংখ্যানে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়। এজন্য প্রযোজন হয় নির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি এবং সতর্কতা গ্রহণের।

No comments:
Post a Comment